ঢাকা, ১৩ই নভেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ২৮শে কার্তিক, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ | ১১ই জমাদিউল আউয়াল, ১৪৪৬ হিজরি

করোনার প্রভাব ও বিশ্ব অর্থনীতি

Faisal

Ahmed


প্রকাশিত: ৯:১০ অপরাহ্ণ, এপ্রিল ১৯, ২০২০
মোহাম্মদ এনায়েতুল্লাহ॥ কৃষি প্রধান দেশগুলো তাদের কৃষি উৎপাদন চেইন অটুট রাখলে করোনা জনিত ক্ষতি পুষিয়ে নেয়া খুবই সহজ হবে। কারণ একদিকে কৃষি উৎপাদন চলবে অন্যদিকে জ্বালানি খাতে বিপুল পরিমাণ বৈদেশিক মূদ্রা সাশ্রয় হবে লকডাউনের ফলে।

জ্বালানি তেল বিক্রি করে বাহাদুরি করা উপসাগরীয় দেশগুলো সবচেয়ে বেশি বিপাকে পড়বে এই বিশ্ব লকডাউনের কারণে। করোনা জনিত বিশ্বব্যাপী লকডাউন চলতে থাকলে তেল সমৃদ্ধ দেশগুলো চরম অর্থনৈতিক বিপর্যয়ের কবলে পড়তে পারে, যা আমাদের মত কৃষি প্রধান দেশে হওয়ার সম্ভাবনা নেই বা খুবই কম। ইতিমধ্যেই তেল উৎপাদনকারী দেশ সমূহের জোট বিশ্ব বাজারে তাদের তেলের দাম পড়ে যাওয়ায় উৎপাদন বন্ধের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। আমাদের দেশে বৈদেশিক মুদ্রা ব্যায়ের প্রধান খাতগুলোর একটি হচ্ছে জ্বালানি তেল আমদানি। লকডাউনের কারণে এই সময় আমাদের দেশে বিপুল পরিমাণ বৈদেশিক মূদ্রা সাশ্রয় হচ্ছে যা আমরা কৃষি খাতে বিনিয়োগ বা ক্ষেত্র বিশেষে ভর্তূকি প্রদানের মাধ্যমে আন্তঃমহাদেশীয় এই দূর্যোগের ক্ষতি পুষিয়ে লাভ করার সুযোগ নিতে পারি।

অস্ত্র বা প্রযুক্তি ব্যবসা যে-সব দেশের অর্থনৈতিক মূল চালিকা শক্তি সে সব দেশকেও করোনা ভাইরাস এর ফলে প্রবৃদ্ধির ঘাটতি মোকাবেলা করতে হবে। কারণ এই দূর্যোগে আন্তঃমহাদেশীয় বাণিজ্য বন্ধ থাকায় এবং উপসাগরীয় অঞ্চলে যুদ্ধ বিরতির ফলে তাদের প্রযুক্তি ও অস্ত্র ব্যবসায় ইতিমধ্যে ধ্বস নেমেছে। তাই তারা লকডাউন তুলে দেয়ার জন্য মরিয়া হয়ে পড়েছে।

যে সমস্ত দেশ ট্যুরিজম ও বিনোদন নির্ভর অর্থনীতির উপর নির্ভরশীল, সে সমস্ত দেশও সাময়িক বিপুল ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছে। কিন্তু তাদের জন্য আশার কথা হলো, করোনা ভাইরাসের কারণে মানুষের মাঝে যে দীর্ঘ মেয়াদি হতাশা ও ঘরবন্দী হওয়ার ঘটনা ঘটেছে তার প্রতিক্রিয়া হিসেবে এই পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে ব্যাপকহারে মানুষ ভ্রমণ ও বিনোদনে বেরুবে এতে কোন সন্দেহ নেই। ফলে ট্যুরিজম বেইজ রাষ্ট্রগুলো খুব সহজেই তাদের ক্ষতি পুষিয়ে নেয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। এই কারণে করোনা পরিস্থিতি শেষে নিজেদের ব্যবসা চাঙ্গা করে ক্ষতি পুষিয়ে নেয়ার জন্য ইউরোপ ও এশিয়ার বহু দেশ ইতিমধ্যে ভবিষ্যত প্ল্যান তৈরি করা শুরু করেছে বলে জানা গেছে। অনেক দেশ করোনা পরবর্তী ভ্রমণ পিপাসুদের চাপ সামাল দেয়ার জন্য লকডাউন পরিস্থিতিতেও কাজ করে যাচ্ছে। এরমধ্যে উল্লেখযোগ্য উপসাগরীয় দেশ সংযুক্ত আরব আমিরাত, কাতার, বাহরাইন, ইউরোপের ইতালি, ফ্রান্স, সুইজারল্যান্ড, স্প্যান, এশিয়ার জাপান, দঃ কোরিয়া, ভিয়েতনাম, সিঙ্গাপুর, মালয়েশিয়া উল্লেখযোগ্য। এসমস্ত দেশ পরিকল্পিত ভাবে ইতিমধ্যে নানা নতুন নতুন ভ্রমণ ও বিনোদন প্যাকেজের প্ল্যান হাতে নিয়ে কাজ করছে।

আমেরিকার প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এর-ও মূল ব্যবসা ট্যুরিজম, হোটেল, ক্যাসিনো, রিয়েল এস্টেট বেইজ। ফলে ট্রাম্পও চাইবেন উপরোক্ত দেশগুলো থেকে যেন তাঁর দেশ কোনভাবে পিছিয়ে না থাকে। যার কিছু নমুনা ইতিমধ্যেই ট্রাম্পের লকডাউন তুলে দেয়ার ঘোষণায় দেখা যাচ্ছে।

অন্যদিকে আমাদের পার্শ্ববর্তী দেশ এশিয়ার অন্যতম বৃহৎ কান্ট্রি ভারত এই সময় তাদের কৃষিতে অধিক মনোযোগ দিচ্ছে। কৃষি ও কৃষকদের নানা সুযোগ সুবিধা দেয়ার মাধ্যমে ভারত উদ্ভূত এই মহামারি পরিস্থিতির ক্ষতি পুষিয়ে নেয়ার চেষ্টা করবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। বৃহৎ কৃষি প্রধান দেশ ভারত তাদের কৃষি উৎপাদন চেইন ঠিক রাখতে পারলে এই অঞ্চলে খাদ্য নিরাপত্তা অটুট থাকবে এবং জিডিপির প্রবৃদ্ধি খুব বেশি হেরফের হবে না, এমনটাই আশা করা যায়। অন্যদিকে এশিয়ার অন্যতম ও প্রধান পরাশক্তি চীন তাদের কৃষি ও প্রযুক্তি দুই খাতেই আধিপত্য বজায় রাখবে এমনটাই ধারণা করছে আন্তর্জাতিক অর্থনৈতিক বিশেষজ্ঞ মহল।
লেখকঃ নির্বাহী সম্পাদক, দৈনিক নয়াদেশ